রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমার স্মৃতিতে কবি জামাল হাবিব হাবু

পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে মানুষের জীবনে মৃত্যু আসবে এটাই চিরন্তনকিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যুকে কখনোই মৃত্যু বলা যায়না,বরং মৃত্যুর মধ্য দিয়েই যেন নতুন করে পুনর্জন্মজীবন যদি হয় মহৎ কর্মে পরিবাহিত তাহলে সেই জীবনের অবসানের মধ্যেই পরম সার্থকতাকারন তার রেখে যাওয়া কর্মের মধ্যে দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানবগোষ্ঠীর মস্তিস্কের চিন্তা ও চেতনার বহি:প্রকাশে আরো সুন্দর ও মহিরুপে পৃথিবীতে বিচরণ ঘটে।  কবি জামাল হাবিব হাবু ঠিক তেমনি একটি  প্রদীপের নাম
  সুদূর প্রবাসে বসে কবির  এই ধরনির লোকারণ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার সংবাদ শুনে আমি স্তম্বিত হয়েছিলাম,এই ভেবে যে, তার সাথে আর দেখা হবেনা 

আমার জীবনে কবির শিল্প সত্বার সাথে পরিচয় ঘটার পূর্বে পরিচয় ঘটেছিলো তার ব্যক্তি সত্বার সাথে, আমার বাবার কর্মজীবনের সহকর্মী হওয়ার সুবাদেব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন আমার অভিভাবক সমতুল্যতার অনেক উপদেশ  আমার জীবনে এগিয়ে চলার পথে নির্দেশনা দিয়েছেযা আজীবন কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ থাকবেতাছাড়া, জীবনদশায়  প্রত্যেক শ্রেনীর মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক ব্যতিক্রম উদাহরণ ছিলেন  অতি সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত এই কবিদৃষ্টান্ত স্বরুপ, আমার সম্পাদনায়  ২০০৪ সালে প্রয়াস নামে রাজবাড়ী সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের বার্ষিকী প্রকাশনায় তার লেখা একটি স্মৃতি সংগীত প্রকাশের সুযোগ ঘটেগীতি কবিতাটিতে তার কর্মস্থল  রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রত্যেক অধ্যক্ষের মহৎ গুন ও অবদানের বর্ণনা এত উদারতা,কাব্যিক এবং ছান্দ্যিক রুপে উপস্থাপন করেছেন যে আকাশের মত বিস্তৃত হৃদয় না থাকলে তা সম্ভব নয়

যখন একটু পরিণত বয়সে উপনিত হই,  তখন আমার পরিচয় হয় কবি  জামাল হাবিব হাবুর এক দার্শনিক স্বত্বার সাথেপ্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা,মানব জীবনের রীতি নীতি, আধ্যাত্মিকতা  ইত্যাদি বিষয়ে ছিলো তার এক নিজস্ব চিন্তাধারাযা তার লেখা গান, কবিতা ও অন্যন্য লেখালেখি এবং তার জীবনাচর্চায় ফুটে ওঠে এক  স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্টেআলাপচারিতায় ফুটে উঠতো,সমাজের শোষিত শ্রেনীর  পক্ষে এবং শোষক শ্রেনীর বিপক্ষে তার নৈতিক অবস্থানএছাড়া জগত সৃষ্টিকর্তার   প্রতি তার গভীর বিশ্বাস ও ভক্তির বহি:প্রকাশ ঘটতো  কৃতজ্ঞচিত্তে
কবির স্পর্শকাতর ও ভাবাবেগ হৃদয়ের কারনে অনেক সময়ই  তাকে পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছেফলোশ্রুতিতে তার রচিত অনেক পান্ডুলিপি প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যায় এবং অনেক লেখা নষ্ট হয়ে যায়এ জন্য  গভীর বেদনা বয়ে বেড়ানোর ভাব ফুটে উঠতো তার একান্ত আলাপচারিতায়

তিনি যেমন বিভিন্ন গুনিজন সংবর্ধনায় সম্মানিত হয়েছেন তেমনি তারও দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিলো রাজবাড়ীর জেলার সকল সাংস্কৃতিক কর্মী ও গুনিজনদের এক মঞ্চে সংবর্ধনা আয়োজনের মাধ্যমে সম্মানিত করা সেই চেষ্টায়  দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও নানা প্রতিকূলতার কারনে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ পেয়েছে  তার বেদনাভরা কন্ঠে

কবি জামাল হাবিব হাবুর উপস্থিতি ছিলো রাজবাড়ীর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অভিভাবকসমতার এই চলে যাওয়ায় একটা শূন্যতা তৈরী হলেও তার রেখে যাওয়া সৃষ্টিকর্ম  দিক নির্দেশনা দেবে এবং তার সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন গভীর শ্রদ্ধাভরে


কবির জীবন কাল :জন্ম ১৯৩৬-মৃত্যু ২৭ এপ্রিল ২০১৪